Thursday, December 5, 2013

চিন্তার সংকট



ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪২০, ৩০ মহররম ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
রাজনীতি
চিন্তার সংকট
মো. মুজিবুর রহমান
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে ঘোষিত চলমান অবরোধ কর্মসূচি আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। অবরোধ কর্মসূচি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে ২ ডিসেম্বর সোমবার। ৩০ নভেম্বর শনিবার থেকে আরম্ভ হওয়া অবরোধ চলার মাঝখানে এর সময়সীমা নতুন করে বাড়ানোর ফলে দেশের সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। এমনিতেই সহিংসতায় পড়ে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। অবরোধ কর্মসূচির কারণে ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রায় ভেঙে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ। তারপরও অবরোধ কর্মসূচির সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়ায় জনসাধারণের দুর্ভোগ আরও বাড়ল। আতঙ্ক ও হতাশাও বাড়ল একই সঙ্গে। এটা কমার কোনো লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। তবে শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক অঙ্গনের অস্থির পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় সেটা দেখার জন্য আমাদের আবারও অপেক্ষা করতে হবে।
যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকবে এটা খুবই স্বাভাবিক। যখনই ভিন্নমতের সৃষ্টি হয় তখনই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বাস্তব পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ এবং দেশের উন্নয়নের বিষয়টি যেসব প্রশ্নের সঙ্গে সম্পর্কিত সে সব প্রশ্ন নিয়ে অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোকে দ্রুত আলোচনায় বসে একমত হওয়া দরকার। সাধারণ মানুষও চায় বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতির অবসান হোক দ্রুত। চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেউই পছন্দ করছে না। অনেককেই আক্ষেপ করে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে একসময় প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠানের ঈষত সম্ভাবনা দেখা দিলেও পরে তা আর বাস্তবায়িত না হওয়াটা চরম দুর্ভাগ্যজনক। বাস্তবত, দেশের অচলাবস্থা কাটিয়ে ওঠার জন্য নানামুখী উদ্যোগ নেয়ার কথা বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও কার্যত কিছুই হচ্ছে না। বরং সমস্যা যে অবস্থায় ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। আগামী দিনগুলোতে খুব তাড়াতাড়ি বর্তমান সংকটের সুরাহা হবে এটা আশা করাও এখন বেশ কঠিন হয়ে উঠেছে। বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন করতে কেন দিনের পর দিন, মাসের পর মাস সময় লাগছে সেটাই আমাদের কাছে এক বিস্ময়ের ব্যাপার।
বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য, মহান স্বাধীনতা অর্জনের পর চার দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেলেও আজঅবধি উন্নত দেশের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে পারল না। এখনও দেশটি উন্নয়নশীল দেশের কাতারেই রয়ে গেল। হতাশার ব্যাপার হলো, এখনও নিরাপদ ও উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার খুঁজে আমাদের পাড়ি জমাতে হয় অন্য দেশে। অথচ ছোট্ট এ দেশে রয়েছে অর্ধশতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়। চিকিত্সার জন্যও যেতে হয় আরেক দেশে। প্রাইভেট ক্লিনিক ও হাসপাতালের সংখ্যাও দেশে কম নয়। এ অবস্থায় খুব তাড়াতাড়ি উন্নত দেশের সারিতে আমরা উঠে যেতে পারব- এটা নিশ্চিত নয়। আরও কত দশক এভাবে তৃতীয় পর্যায়ের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের নাম লেখা থাকবে সেটা অনুমান করাও এখন অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী সেটা আমরা বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন রাখতে চাই, রাজনীতি যদি সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য হয়, রাজনীতি যদি দেশের উন্নয়নের জন্য হয়, রাজনীতি যদি নিরাপদ শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য হয় তাহলে দেশে এতো অস্থিরতা কেন? কেন শিক্ষার্থীরা নিরাপদে স্কুল-কলেজে যেতে পারবে না? কেন জাতীয় পরীক্ষাগুলো বারবার পিছিয়ে দিতে হবে?
কেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্থবির হয়ে থাকবে দিনের পর দিন? কেন শিশু শিক্ষার্থীদের আতঙ্কে ভুগতে হবে? কেন সন্তানের অনিশ্চিত শিক্ষাজীবন নিয়ে অভিভাবকদের রক্তচাপ বাড়বে? কেন আমাদের আক্ষেপ করে বলতে হবে, আমরা যথেষ্ট উন্নত চিন্তার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে না পারাটা কি আমাদের ব্যর্থতা নয়? তাহলে কি আমাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চিন্তার সংকট?
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.com

No comments:

Post a Comment