ঢাকা, বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর
২০১৩, ০৪ পৌষ ১৪২০, ১৪ সফর ১৪৩৫
(দৃষ্টিকোণ)
আর নয় অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ
মো. মুজিবুর রহমান
রাজনৈতিক কারণে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে আছে।
কোনো স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। নির্ধারিত
পরীক্ষাগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে। ডিসেম্বর মাস শেষ হতে চলল। অথচ অনেক স্কুলের বার্ষিক
পরীক্ষাও শেষ হয়নি। একান্ত বাধ্য হয়েই পিছিয়ে দেয়া হয়েছে অনেকগুলো
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম। ১৬ ডিসেম্বর ইত্তেফাকে খবর
বেরিয়েছে, টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে একের পর এক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি
পরীক্ষা স্থগিত করা হচ্ছে। এ কারণে আটকে গেছে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪
শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত ভর্তি
পরীক্ষা একাধিকবার পিছিয়ে দিতে হয়েছে। ফলে উচ্চ শিক্ষায় সেশনজট আরও বৃদ্ধির আশংকা
দেখা দিয়েছে। এসব কারণে স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় এখন দেখা দিয়েছে
চরম অনিশ্চয়তা। এসব দিক নিয়ে আমরা একই কথা বিভিন্নভাবে বারবার বলার চেষ্টা করেছি।
শিক্ষা ব্যবস্থা পর্যুদস্ত হওয়া এবং ভেঙে পড়ার বিষয়টি গণমাধ্যমও তুলে ধরেছে
গুরুত্বের সঙ্গে। আমরা বলার চেষ্টা করেছি, যে কোনো কারণেই হোক শিক্ষা কার্যক্রম
যদি বিপর্যস্ত হয় তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ আরও
সংকটে পড়বে, পিছিয়ে যাবে দেশ; ব্যাহত হবে উন্নয়ন। আমরা এটাও বলতে চেয়েছি,
শিক্ষার্থীরা যদি নিয়মিত পড়ালেখা করতে না পারে তাহলে যতটুকু ক্ষতি হবে তাদের নিজের
এবং পরিবারের, তার চেয়ে আরও বেশি ক্ষতি হবে দেশের। অথচ আমাদের আবেদন-নিবেদন যাদের
উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল, এসব মোটেও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারছে বলে মনে হয় না।
বাস্তবে আমরা দেখছি একের পর এক রাজনৈতিক কর্মসূচি আসছে, আর বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষা
কার্যক্রম পরিচালনায়। মানুষের জীবনযাত্রাও এখন স্বাভাবিকভাবে চলছে না। কার্যত
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটেরও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক
রাখতে গিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও যেন অনেকটা অসহায় হয়ে আছে। ফলে আলো বিতরণকারী
শিক্ষা নিজেই এখন আলোহীন অবস্থায় গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত!!
অনেক দিন ধরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন চরম অস্থির হয়ে আছে। এ নিয়ে
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক মতপার্থক্য। কিন্তু যতই
মতপার্থক্য থাকুক, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্ন
সৃষ্টি করা এবং শিক্ষার্থীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়া কতটুকু
যুক্তিযুক্ত ও উচিত কাজ হচ্ছে সেটাও ভাবতে হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষা লাভের মতো মৌলিক অধিকার হরণ হচ্ছে কিনা সেটা বিবেচনায় রাখা
দরকার। নিরাপদে শিক্ষা লাভের অধিকার সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত। কাজেই গুরুত্ব দিতে হবে
শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পড়ালেখা করার অধিকারকে। তাদের জন্য নিশ্চিত করতে হবে
শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ। শিক্ষাকে উপেক্ষা করলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে ঘোর
অন্ধকার।
এখন স্পষ্টভাবেই বলা যায়, রাজনৈতিক কারণে আমাদের শিক্ষার্থীদের
অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। আমরা জানি এ ক্ষতি আর কোনো দিন পূরণ করা সম্ভব হবে না
কারও পক্ষেই। স্কুল পর্যায়ে নবপ্রবর্তিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠ্য বিষয়ের সিলেবাস
শেষ করা গেল না। এরপরও যতটুকু পড়ানো হয়েছে তার ওপরও যদি নির্বিঘ্নে পরীক্ষা নেয়া
না যায় তাহলে শিক্ষার্থীরা কিসের ভিত্তিতে ওপরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে? হয়তো এমন
এক সময় আসবে যেসব স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করা সম্ভব হয়নি সেসব স্কুলে অটো
প্রমোশন দিতে বাধ্য হবে কর্তৃপক্ষ। এখন এটাও শোনা যাচ্ছে, স্কুলগুলোয় গৃহীত
পূর্বের পরীক্ষা বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে প্রমোশন দেয়া হতে পারে।
কিন্তু এটা কি আমাদের জন্য খুব ভালো উদাহরণ হবে?
আমাদের দুঃখ, আজ যারা শিক্ষার্থী তারা জীবনের শুরুতেই দেখল,
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরামহীনভাবে বিরাজ করছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। এমনকি তারা
এটাও দেখল, অনেক চেষ্টার পরও নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতার অবসান করা যায়নি।
নানামুখী উদ্যোগ নিয়েও সম্ভব হয়নি রাজনৈতিক সমঝোতার প্রতিষ্ঠা করা। এ ধরনের
পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা কিভাবে উন্নত নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করবে? তাদের
রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে কিভাবে? শিক্ষার্থীরা বর্তমানে যে ধরনের
রাজনৈতিক আচরণের মুখোমুখি হচ্ছে সেটা তাদের কাছে সমপূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা এ
ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ চাই না। প্রশ্ন থেকে যায়, কেন তাদের স্বার্থের দিকটি
উপেক্ষা করে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ঠেলে দেয়া হলো?
অধিকাংশ শিক্ষার্থীর মনে রাজনীতি নিয়ে কোনো উচ্চাভিলাষ নেই। শুধু তাই নয়, তারা
বর্তমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি পছন্দও করছে না, এমনকি রাজনৈতিক
কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততাও নেই। তাহলে তাদের অস্থির রাজনীতির
নির্মম শিকার হতে হবে কেন—এ প্রশ্নের জবাব কী?
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক,সরকারি
টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.com http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMTJfMThfMTNfMV81XzFfOTQxMTQ=
No comments:
Post a Comment