ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩, মঙ্গলবার : পৌষ ৩, ১৪২০
(উপ-সম্পাদকীয়)
রাজনীতিকদের কাছে শিক্ষার
কোনো গুরুত্ব নেই!
মোঃ মুজিবুর রহমান
প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩
সদ্য
প্রয়াত দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার সম্মানে ১৯৯৬ সালের ১০
জুলাই লন্ডনের বাকিংহাম প্যালেসে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক
অনুষ্ঠানে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, দীর্ঘদিনের অবরোধ তার দেশের
মানুষের কর্মদক্ষতাকে প্রায় ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। তিনি উপলব্ধি করতে
পেরেছিলেন, শিক্ষাকে অগ্রাধিকার না দিলে কোনো জাতি বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে
দাঁড়াতে পারে না। এ কারণে মানবসম্পদে বিনিয়োগ করা এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের
মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা দক্ষিণ আফ্রিকার মূল লক্ষ্য বলে তিনি তার ভাষণে
উল্লেখ করেন। শিক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়ন ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়ার
জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক তৎপর। অবরোধকে তিনি রাজনৈতিকভাবে অবিচার বলে আখ্যায়িত
করেন এবং এর ফলে যে তার দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন থমকে দাঁড়িয়েছিল সেটাও
তিনি উল্লেখ করতে ভোলেননি।
পরিস্থিতি,
প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হলেও আমাদের দেশে এখন রাজনৈতিক অবরোধ চলছে দিনের পর
দিন, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। এটাও কি আমাদের ওপর এক ধরনের রাজনৈতিক অবিচার নয়? স্পষ্ট
দেখা যাচ্ছে, অবরোধের ফলে দেশের শিক্ষা কার্যক্রম একরকম ধ্বংসের মুখে এসে
দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আমরা বিনয়ের সঙ্গে প্রশ্ন করতে চাই, অস্থির
রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিকভাবেও দেশ অপূরণীয় ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে,
এটাও কি বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই? শিক্ষা খাতকে ধ্বংস করে কি কোনো দেশ উন্নয়নের
পথে এগিয়ে যেতে পারে? আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, শিক্ষা কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা
ব্যবস্থাপক সবাই যেন কেমন অসহায় হয়ে আছে অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কাছে।
শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা তো এক রকম জিম্মি হয়ে আছেন। এভাবে যদি দিনের পর
দিন পার হয়ে যায়, তাহলে দেশ কীভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে সেটাই এখন সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
আমরা
দেখছি, শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি আমাদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। রাজনীতির কাছে
আজ হার মানছে শিক্ষা। শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি অগ্রাধিকার পাচ্ছে। রাজনীতিকে বাদ দিতে
আমরা বলছি না। সেটা বলার সুযোগও নেই। কারণ সারা দুনিয়াতেই রাজনীতির গুরুত্ব রয়েছে।
অন্য দেশের সঙ্গে উন্নয়ন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলেও রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করা
দরকার। তবে শিক্ষাকে উপেক্ষা করে নয় কখনোই। উন্নত দেশগুলো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করলেও তারা শিক্ষাকে উপেক্ষা করে না। বরং শিক্ষা
কার্যক্রম যাতে বিঘ্নের মুখে না পড়ে সেই চেষ্টা সব সময় অব্যাহত রাখে। তারা শিক্ষার
আন্তর্জাতিক মান ধরে রাখার জন্য যা যা করা দরকার ঠিক তা-ই করে বিনা দ্বিধায়।
মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে তারা বিদেশী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে। ফলে তাদের জাতীয় আয়
বাড়ে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয় দেশ। এ কারণেই তাদের দেশ উন্নত দেশে পরিণত হতে
পেরেছে।
অন্যদিকে আমাদের রাজনৈতিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখানে অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে রাজনীতির প্রতি আমাদের আকর্ষণ প্রবল। এ দেশে রাজনীতি বোঝেন না এমন মানুষের সংখ্যা কম। রাজনীতি বাদ দিয়ে যেন আমাদের অনেকের দিনের কাজ শুরুই হতে পারে না। আমাদের মিডিয়াও রাজনীতির খবরাখবর অনেকটা স্থান দখল করে রেখেছে। টেলিভিশন চ্যানেলে আজকাল রাজনীতি নিয়ে টকশো না হলে সেই চ্যানেল দর্শকরাও তেমন একটা দেখে না। যে চ্যানেলে রাজনীতি নিয়ে যত বেশি উত্তপ্ত আলোচনা হয়, সেই চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা তত বেশি। আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষ যেমন রাজনীতি সচেতন, তেমনি লেখাপড়া না জানা মানুষও রাজনীতি নিয়ে কম সচেতন নয়। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে উদাসীন থাকলে কি উন্নয়ন সম্ভব?
অন্যদিকে আমাদের রাজনৈতিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এখানে অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে রাজনীতির প্রতি আমাদের আকর্ষণ প্রবল। এ দেশে রাজনীতি বোঝেন না এমন মানুষের সংখ্যা কম। রাজনীতি বাদ দিয়ে যেন আমাদের অনেকের দিনের কাজ শুরুই হতে পারে না। আমাদের মিডিয়াও রাজনীতির খবরাখবর অনেকটা স্থান দখল করে রেখেছে। টেলিভিশন চ্যানেলে আজকাল রাজনীতি নিয়ে টকশো না হলে সেই চ্যানেল দর্শকরাও তেমন একটা দেখে না। যে চ্যানেলে রাজনীতি নিয়ে যত বেশি উত্তপ্ত আলোচনা হয়, সেই চ্যানেলের দর্শকসংখ্যা তত বেশি। আমাদের দেশে শিক্ষিত মানুষ যেমন রাজনীতি সচেতন, তেমনি লেখাপড়া না জানা মানুষও রাজনীতি নিয়ে কম সচেতন নয়। কিন্তু শিক্ষা নিয়ে উদাসীন থাকলে কি উন্নয়ন সম্ভব?
আমরা
জোরের সঙ্গে বলতে চাই, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে দরকার স্থিতিশীল
রাজনৈতিক পরিবেশ। আমাদের আজ গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করতে হবে, দেশে যদি দীর্ঘদিন
ধরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করে তাহলে সামগ্রিক অগ্রগতি থমকে দাঁড়াবে। মুখ থুবড়ে
পড়বে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। বিরূপ প্রভাব পড়বে শিক্ষাক্ষেত্রে। আর শিক্ষা খাত যদি
একবার ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে সেই ক্ষতি পূরণ করতে কয়েক দশক লেগে যাবে। এমনকি
শিক্ষার ক্ষতি পূরণ করা সম্ভব নাও হতে পারে। এমনিতেই অস্থির ও অসহনশীল রাজনৈতিক
পরিবেশ শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অনেকের মধ্যে দেখা দিয়েছে
মূল্যবোধের অবক্ষয়। বাস্তবে এখন সেটাই হতে চলেছে। দেশের স্কুল-কলেজ একরকম বন্ধ হয়ে
আছে বহুদিন ধরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পড়ালেখা হচ্ছে না। স্থবির হয়ে আছে
উচ্চশিক্ষা স্তরে ভর্তির কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা এক রকম অলস সময় কাটাচ্ছে। শিক্ষক
ও অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। এভাবে বেশিদিন চলতে পারে না।
আমাদের
আক্ষেপ, রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমকে নির্বিঘ্ন রাখার
ব্যাপারে কোনো কর্মপরিকল্পনা নিতে দেখা যায় না। শুধু পরীক্ষা চলাকালে রাজনৈতিক
কর্মসূচি না দেয়ার জন্য কর্মসূচি আহ্বানকারী দলের প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে অনুরোধ
করা হয় মাত্র। আবার যেসব দল পরীক্ষা চলাকালে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়,
তারাও বিবেচনা করে না শিক্ষার্থীদের ক্ষতির বিষয়টি। আমরা বুঝতে অক্ষম শিক্ষা
কার্যক্রমকে বিঘ্ন করে শুধু রাজনীতির মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব।
লেখাটি শেষ করার আগে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই। বিশাল ভারতজুড়ে রয়েছে নানা ভাষার মানুষ। নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সেখানে বসবাস করে। রাজনৈতিক দলের সংখ্যা সেখানে তুলনামূলকভাবে আমাদের চেয়ে কম। ভারতে যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও রাজনৈতিক মতভেদ নেই, তা নয়। সেখানেও নানা দাবিতে বন্ধ হয়, ধর্মঘট হয় প্রায়ই।বিঘ্ন ঘটে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। তারপরও ভারতের জনগণ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সে দেশে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নের মুখে পড়তে শোনা যায় না সচরাচর। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এজন্যই আমাদের অনেকের মধ্যে নিরাপদ শিক্ষার খোঁজে ভারত যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অথচ ভারতের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দেশে পড়ালেখা করতে আসে না। আগে উচ্চ শিক্ষালাভের উদ্দেশে কিছু ভারতীয় ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে আসত। কিন্তু এখন ভারত থেকে ছাত্রছাত্রী আসার হার কমতে কমতে তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এ থেকেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কী দশা সেটা উপলব্ধি করা যায়। আমরা কি এখনও আমাদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেব না?
লেখাটি শেষ করার আগে আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটি উদাহরণ উল্লেখ করতে চাই। বিশাল ভারতজুড়ে রয়েছে নানা ভাষার মানুষ। নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সেখানে বসবাস করে। রাজনৈতিক দলের সংখ্যা সেখানে তুলনামূলকভাবে আমাদের চেয়ে কম। ভারতে যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও রাজনৈতিক মতভেদ নেই, তা নয়। সেখানেও নানা দাবিতে বন্ধ হয়, ধর্মঘট হয় প্রায়ই।বিঘ্ন ঘটে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। তারপরও ভারতের জনগণ এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে সে দেশে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নের মুখে পড়তে শোনা যায় না সচরাচর। বরং শিক্ষাক্ষেত্রে ভারতের রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এজন্যই আমাদের অনেকের মধ্যে নিরাপদ শিক্ষার খোঁজে ভারত যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অথচ ভারতের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দেশে পড়ালেখা করতে আসে না। আগে উচ্চ শিক্ষালাভের উদ্দেশে কিছু ভারতীয় ছাত্রছাত্রী বাংলাদেশে আসত। কিন্তু এখন ভারত থেকে ছাত্রছাত্রী আসার হার কমতে কমতে তা প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এ থেকেই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কী দশা সেটা উপলব্ধি করা যায়। আমরা কি এখনও আমাদের শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেব না?
মোঃ মুজিবুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ,
ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.com
http://www.jugantor.com/sub-editorial/2013/12/17/50375
http://www.jugantor.com/sub-editorial/2013/12/17/50375
No comments:
Post a Comment