ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৩, ২৮
অগ্রহায়ণ ১৪২০, ০৮
সফর ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
আলোকপাত
আবারও অপেক্ষা
মো. মুজিবুর রহমান
আমরা ভাবিনি হরতাল হবে ঘন ঘন, অবরোধ হবে উপর্যুপরি; ফল হিসেবে বিপর্যস্ত হবে যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্থবির হয়ে পড়বে
ব্যবসা-বাণিজ্য, জনজীবনে দেখা দেবে চরম অস্বস্তি। আমাদের চিন্তায়ই ছিল না
রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে ব্যাপকভাবে, স্কুল-কলেজের পড়ালেখা
হবে বাধাগ্রস্ত, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত পরীক্ষাসহ সব ধরনের পরীক্ষা
পিছিয়ে যাবে বারবার। আমাদের এখনও বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হয় যে, অস্থিতিশীল
রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত নির্দয়ভাবে কোটি কোটি শিক্ষার্থীকে ঠেলে দিয়েছে গভীর
অন্ধকারের দিকে। এদিকে অনিশ্চিত হয়ে পড়া স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার
উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী এক সপ্তাহের জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি না রাখার আহ্বান
জানিয়েছেন আবারও। প্রশ্নের সৃষ্টি হয়, যে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নভাবে
ক্লাস করতে পারছে না, নির্ধারিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না, এমনকি
আতঙ্কমুক্ত পরিবেশে স্কুল-কলেজে যেতেও পারছে না সেই রাজনীতির ওপর তারা আস্থা স্থাপন
করবে কিভাবে? কিভাবে তারা রাজনীতি সম্পর্কে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ
করবে? এ ধরনের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের সুনাগরিক
হিসেবে গড়ে তোলার পথ দেখাবে কিভাবে? এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কি ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রতি
বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠছে না? বাস্তবত নেতিবাচক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের মধ্যে
নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে- এটা স্বীকার করতে আমাদের দ্বিধা নেই। আক্ষেপের ব্যাপার, ধ্বংসাত্মক
কর্মকাণ্ডের প্রভাব থেকে তাদের দূরেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
এক সপ্তাহ আগে ঢাকা ঘুরে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
সুজাতা সিং। প্রায় সাড়ে একুশ' ঘণ্টার সফরে তিনি ঢাকায় এসে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ
পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। চেষ্টা করেছেন বড় দলগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক
সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু দৃশ্যত পরিস্থিতির তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য
অগ্রগতি হয়নি। এরপর বলা যায় অনেকটা নিষ্ফল হয়েই তিনি ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এ নিয়ে
সাধারণ মানুষের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে।
সুজাতা সিংয়ের ঢাকা ত্যাগের পর বাংলাদেশে এসেছেন জাতিসংঘের
মহাসচিব বান কি মুনের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। তারও উদ্দেশ্য, নির্বাচন নিয়ে
সৃষ্ট সংকট নিরসন করার ব্যাপারে মধ্যস্থতা করা। আমরা ভেবেছিলাম তারানকো ঢাকায় এসে
উদ্যোগ নেয়ার পর দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের অন্ধকার কেটে যাবে সহসাই। অনেকের ধারণা
ছিল, তিনি নিশ্চয়ই এমন কোনো ফর্মুলা নিয়ে আসছেন যা আমাদের
বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনে সহায়ক হবে। অথচ তার আগমনের কয়েক দিন পরও
অস্থিতিশীল পরিস্থিতির তেমন কোনো দৃশ্যমান উন্নতি হতে দেখা যাচ্ছে না। তারানকোর
ঢাকা সফর সংক্ষেপে পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনি এসেই প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে
একের পর এক বৈঠক করেছেন। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছেন। গণমাধ্যমের
প্রতিনিধিদেরও সময় দিয়েছেন। সংলাপ অনুষ্ঠান নিয়ে কর্মব্যস্ত থেকেছেন সারাদিন। তার
উপস্থিতিতে বড় দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়েছে ১০ ডিসেম্বর। শেষ
মুহূর্তে ঢাকায় তার অবস্থানের সময়সীমা একদিন বাড়িয়ে দেয়ার ফলে আমাদের মনে আবারও
আশার সঞ্চার হয়েছে যে, সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় তিনি অনেকটাই সফল হতে চলেছেন। তবে শেষ
পর্যন্ত কী হয় সেটা দেখার জন্য আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে তাতে সন্দেহ নেই। এ
পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিবেশ কেটে গেছে এমনটা বলার সময় এখনও
আসেনি। তবুও আমরা আশাবাদী হতে চাই। আমরা দেখতে চাই, খুব দ্রুতই অচলাবস্থার নিরসন হবে এবং স্বস্তি ফিরে আসবে
সর্বত্র। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের প্রত্যাশাও এটা।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.comhttp://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMTJfMTJfMTNfMV80XzFfOTI2ODY
No comments:
Post a Comment