Friday, January 3, 2014

নতুন বছর হোক আতঙ্কমুক্ত



ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০১৪, ২০ পৌষ ১৪২০, ৩০ সফর ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
নতুন বছর হোক আতঙ্কমুক্ত
মো. মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশের মানুষের ২০১৩ সাল কেটেছে নানা ধরনের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যদিয়ে। বছরের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণে উত্তপ্ত ছিল পুরো দেশ। তবে উত্তাপজনক রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবসান হয়নি আজও। রাজনৈতিক অঙ্গনে এখনও বিরাজ করছে মারমুখী পরিবেশ। হামলা-পাল্টা হামলা চলছে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের মধ্যে। এর নির্মম শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক সহিংসতায় পড়ে অনেকের প্রাণহানিও ঘটেছে। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের ফলে আতঙ্কজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সর্বত্র। রাজনৈতিক কারণে শিক্ষা ব্যবস্থা হয়েছে বিপর্যস্ত, ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটেছে ব্যাপকভাবে। স্কুল-কলেজ ছিল এক রকম বন্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখাও বিঘ্নিত হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। লাগাতার হরতাল ও কয়েক দফা অবরোধের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেমে এসেছে ধস। দুশ্চিন্তা ও আতঙ্কে সময় কেটেছে ব্যবসায়ীদের। ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষি খাতও। দেশে সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় কারও মুখে হাসি নেই। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক থেকে আরম্ভ করে শিক্ষক, চিকিত্সক, চাকরিজীবী, পেশাজীবী, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষরাও চিন্তাক্লিষ্ট মনে দিন পার করেছেন। তবে তাদের যে দুশ্চিন্তা শেষ হয়ে গেছে এমনটি নয়। কারণ রাজনৈতিক বিরোধের মীমাংসা হয়নি এখনও। সংবিধানের আওতায় থেকে কিভাবে বিদ্যমান সংকট নিরসন করা যায় সে রকম চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সরকার। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের প্রধান দাবি হলো, আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে নতুন তফসিল ঘোষণা এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। তাদের এ দাবির সমর্থনে 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' নাম দিয়ে ঢাকায় কর্মসূচি পালনের চেষ্টাও করেছে। সর্বশেষ ১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অবরোধের ঘোষণাও দেয়া হয়ে গেছে। কিন্তু এত কিছুর পরও রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কোনো পথেই সমাধান মিলছে না। বাস্তব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক বিরোধ মেটানোর কোনো পথ আপাতত খোলা নেই। কারণ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা অনেকবার আলোচনার টেবিলে বসলেও কার্যত কোনো সমাধান আসেনি। জাতিসংঘের উদ্যোগেও আলোচনা হয়েছিল। সেটাও রাজনৈতিক সংকটের সুরাহা করতে পারেনি। মোটা দাগে কথা হলো, জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনও কোনো সমঝোতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এ নিয়ে কোনো ধরনের আপসরফা হবে—এমন লক্ষণও দৃশ্যমান নয়। ফলে আমরা মোটামুটি ধরে নিতে পারি চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও দীর্ঘ হবে। বাড়বে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগ। উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার পরিসমাপ্তি ঘটবে না সহসা। এটাই আমাদের রাজনীতির এক করুণ ও দুঃখজনক দিক!
আমাদের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগে পোশাক শিল্পের বহু অর্ডার চলে যাচ্ছে প্রতিবেশি দেশগুলোতে। বিদেশি ক্রেতারা এখন আর অস্থির ও বিপদসংকুল পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী নন। মনিটর ফ্রন্টিয়ার মার্কেটস প্রকাশিত '২০১৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের দক্ষিণ এশিয়া আউটলুক' শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক খাতের ৫০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ চলে গেছে ভারতে। চলতি বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে বাংলাদেশ এই পরিমাণ ক্রয়াদেশ হারানোর মূল কারণ রাজনৈতিক সহিংসতা। এ ছাড়া ক্রমাগতভাবে চলে আসা হরতাল ও অবরোধের মুখে অভ্যন্তরীণ পণ্য পরিবহনেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। গ্রামের যে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য শহরে সরবরাহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতেন, তারা হরতালের মধ্যে পণ্য পরিবহন করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সরবরাহ করতে না পারায় অনেক কাঁচামাল পচে নষ্ট হয়েছে ক্ষেতেই। ফলে একদিকে কৃষকরা যেমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তেমনি দেশেরও ক্ষতি হয়েছে অনেক। দিন-মজুর, রিকশা-শ্রমিক, ভ্যানচালক, বাসের কন্ডাক্টর সবারই আয়-রুজি কমে গেছে। কাজেই সব দিক বিবেচনা করে বলা যায়, ২০১৩ সাল আমাদের জন্য ভালো কাটেনি মোটেও।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ 
http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDFfMDNfMTRfMV80XzFfOhttp://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDFfMDNfMTRfMV80XzFfOTgzMTM=TgzMTM=

No comments:

Post a Comment