ঢাকা, বৃহস্পতিবার,
৩০ জানুয়ারি ২০১৪, ১৭ মাঘ ১৪২০, ২৮ রবিউল আওয়াল ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
আলোকপাত
সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করা হোক
মো. মুজিবুর রহমান
আমাদের দেশে অনেক বছর ধরে সপ্তাহে দু'দিন ছুটি চলে আসছে। একসময় সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রবিবার। তারপর করা হলো শুক্রবার। পরে এর সঙ্গে আরও একদিন যুক্ত করে শনিবারও সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিন থাকবে নাকি একদিন করা হবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানামুখী আলোচনাও হয়েছে অনেকবার। এরপর বলা হলো, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিন বহাল রাখাই যৌক্তিক। যখন দেশে বিদ্যুতের ব্যাপক ঘাটতি ছিল তখন এ যুক্তিটি মেনে নিতে কারোর কোনো আপত্তি ছিল বলে মনে হয় না। কিন্তু এখন দেশে যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিন বহাল রাখার কোনো যুক্তি নেই বলে মনে করি।
সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোয় সপ্তাহে দু'দিন ছুটি থাকলে তা অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে অনেকাংশে স্থবির করে দিতে পারে। বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সকাল ১০টায় লেনদেন আরম্ভ করে। ফলে চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের পক্ষে ব্যাংকে কাজ শেষ করে নিজের কর্মে উপস্থিত হওয়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটছে। শুধু ব্যাংকের সময়ের কারণেই বহু মানুষের ব্যক্তিগত কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। অথচ আগের মতো ব্যাংকে লেনদেন আরম্ভের সময় সকাল ৯টায় নির্ধারণ করা হলে এ পরিস্থিতির অবসান হতো। প্রয়োজন হলে দিবসের শেষদিকে ব্যাংকের সময়সীমা একঘণ্টা এগিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমরা এখনও নানা দিক থেকে উন্নত দেশের চেয়ে অনেক পেছনে পড়ে আছি। আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিন থাকার কারণে যেসব দেশে আমাদের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের কাজ করতে হয়, সে সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ অন্যান্য লেনদেনে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ উন্নত দেশগুলোর অনেকগুলোতেই সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলো রবিবার, আর আমাদের ছুটি থাকে শুক্রবার ও শনিবার। এ কারণে বাণিজ্যিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও আমরা সপ্তাহে তিনদিন পিছিয়ে থাকছি। সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিনের পরিবর্তে একদিন করা হলে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ আরও বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।
আমাদের বাৎসরিক ছুটির হিসাব করলে দেখা যায়, সপ্তাহে একদিন হিসাবে বছরে ৫২ দিন ছুটি থাকার কথা। অথচ সপ্তাহে দু'দিন হিসাবে ওই ৫২ দিনের সঙ্গে আরও ৫২ দিন যুক্ত হয়ে মোট ছুটি দাঁড়ায় ১০৪ দিন। প্রশ্ন ওঠে, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যদি বছরে সাড়ে ৩ মাস বন্ধ থাকে তাহলে কাজকর্মে গতি আসবে কিভাবে? অন্যদিকে দেখা যায়, সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত ছুটি থাকায় প্রতিবছর কর্মক্ষম ব্যক্তির ৪১৬ কর্মঘণ্টা কমে যাচ্ছে। আবার কোনো সপ্তাহে যদি বৃহস্পতিবার কিংবা পরবর্তী সপ্তাহে রবিবার সরকারি ছুটি থাকে তাহলে ওই সপ্তাহে একটানা ৩ দিন ছুটি হয়। ফলে মোট কর্মদিবস আরও কমে যায়। এসব কারণে অর্থনৈতিকভাবেও দেশ পিছিয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা সাপ্তাহিক ছুটি দু'দিনের পরিবর্তে একদিন করার দাবি উত্থাপন করেছেন। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে গত বছরের প্রায় পুরোটা সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাদের ব্যবসার যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার জন্য সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে একদিন করা দরকার।
এখন দেশে দুই ধরনের সাপ্তাহিক ছুটি দেখা যায়। এক ধরনের ছুটি হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। আরেক ধরনের ছুটি শিক্ষা প্রশাসনসহ সরকারের অন্যান্য বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে একদিন শুধু শুক্রবার ছুটি ভোগ করছে। অন্যদিকে শিক্ষা বিভাগ হলেও শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনাকারী শিক্ষা অধিদপ্তর, বিভাগীয় শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলো সপ্তাহে দু'দিন ছুটি ভোগ করছে। ফলে অধীনস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শনিবার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় কোনো জরুরি প্রয়োজনে শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারছে না। শুধু তাই নয়, যে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য তাদের সপ্তাহে দু'দিন অপেক্ষা করতে হয়। এসব সমস্যা দূর করার জন্যও সপ্তাহে একদিন ছুটি পুনর্নির্ধারণ করা দরকার।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.com