Wednesday, May 21, 2014

অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কী?



ঢাকা, বুধবার ২১ মে ২০১৪, জ্যৈষ্ঠ ১৪২১, ২১ রজব ১৪৩৫
(উপসম্পাদকীয়)
শিক্ষা
অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যকী?
মো. মুজিবুর রহমান
এবারের এসএসসি পরীক্ষার ফল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে দেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম পাসের হার প্রায় একশ' কাছাকাছি পৌঁছে গেছে প্রকাশিত ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবার মাধ্যমিকে গড় পাসের হার ৯২.৬৭ ভাগ কোনো কোনো বোর্ডে পাসের হার ৯৪ ভাগেরও বেশি বোর্ডভিত্তিক ফল বলছে, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯৪.৩৪ ভাগ, ঢাকা বোর্ডে ৯৩.৯৪, দিনাজপুর ৯৩.২৬, যশোর ৯২.১৯, চট্টগ্রাম ৯১.৪০, বরিশাল ৯০.৬৬, কুমিল্লা ৮৯.৯২, মাদরাসা বোর্ডে ৮৯.২৫, সিলেট বোর্ডে ৮৯.২৩ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১.৯৭ ভাগ পরিসংখ্যান পরীক্ষার্থীদের পাসের ক্ষেত্রে ধারাবাহিক উন্নতির প্রমাণ বহন করে যেসব পরীক্ষার্থী সাফল্য অর্জন করেছে আমরা সুযোগে তাদের অভিনন্দন জানাই
এখানে বলা দরকার, এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষার ফলে আশাব্যঞ্জক উন্নতি ঘটলেও এর বিপরীতে লাখ লাখ পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছে অবশ্য বছর পাসের হার আগের বছরের তুলনায় আরো বেড়ে যাওয়ায় অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা এখন অনেক কমে এসেছে বছর অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা এক লাখের বেশি কিন্তু এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, এক লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার কারণ কী? তাদের ভবিষ্যৎই বা কী? অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের জন্য এখন আমাদের কী করা দরকার?
আগেই বলা হয়েছে, আমাদের দেশে প্রতিবছর এসএসসি এইচএসসি পরীক্ষায় বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হচ্ছে বিগত বছরগুলোয় এসএসসি পরীক্ষায় দুই লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছিল আমাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, পরীক্ষায় যারা ভালো ফল করে কেবল তাদের নিয়েই গণমাধ্যমসহ প্রায় সব মহলে ব্যাপক প্রশংসা করতে দেখা যায় সাফল্যের আনন্দে উচ্ছ্বসিত পরীক্ষার্থীদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি প্রকাশিত হয় মিডিয়ায় পরীক্ষায় ভালো করা সেরা স্কুল-কলেজের প্রধানদের প্রতিক্রিয়া অভিমতও প্রকাশিত হয় একই সঙ্গে কেন এবং কিভাবে ভালো ফল হলো তার যত কলাকৌশল রয়েছে সেগুলো উঠে আসে এসব আলোচনায় আলোচনা হয় ভালো ফল করার পেছনে বিভিন্নমুখী প্রচেষ্টা এবং শিক্ষার মান নিয়ে অথচ ফেল করা পরীক্ষার্থীদের নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হয় না বলতে গেলে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীরা একরকম আড়ালে থেকে যায় এটাই শিক্ষা নিয়ে আমাদের চিন্তা-চেতনার এক দুর্বল দিক বলে মনে করি
সন্দেহ নেই, যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় তারা অনেকটাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণে তাদের পরিবারের কাছ থেকে এমনকি স্কুলের কাছ থেকেও তারা সচরাচর কোনো ইতিবাচক আচরণ পায় না শুধু তাই নয়, ফেল করা পরীক্ষার্থীদের সবাই অন্য চোখে দেখে তাদের খবর কেউ রাখে না ফলে তারা নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করে কেন তারা ফেল করল, কী করলে তারা আগামীতে পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে এমন উদ্যোগ পরিকল্পনা নিয়েও কেউ তাদের কাছে এগিয়ে যায় না বললেই চলে অথচ আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার, যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয় তারা যদি ভবিষ্যতে পুনরায় পরীক্ষা দিয়ে ভালো করার কোনো উত্সাহ না পায়, তাদের সামনে যদি কোনো সঠিক পথ তুলে ধরা না হয় তাহলে একসময় তারা হারিয়ে যাবে পড়ালেখার জগত্ থেকে অনেকেই পড়ালেখার মূল ধারা থেকে ছিটকে পড়ে বিপথগামী হয় কেউ কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে অনেকটা না জেনে-বুঝেই এভাবে তারা পরিবার, সমাজ রাষ্ট্রের জন্য বিরাট বোঝা হিসেবে আবির্ভূত হয় এসব ঘটে তারা বয়ঃসন্ধিকালের শিক্ষার্থী হওয়ার ফলে কারণ সময় তারা অনেকটা আবেগতাড়িত হয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে কাজেই যারা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে তাদের জন্য সরকারিভাবে বিভিন্ন প্রণোদনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন তারা যাতে পুনরায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণে আগ্রহী হয় সেজন্য নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তাদের প্রতি করতে হবে ইতিবাচক আচরণ তাদের উত্সাহ দিতে হবে আগামী প্রজন্মের স্বার্থেই দরকার হলে পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যয় হরাসের পদক্ষেপসহ আর্থিকভাবে সহায়তা করার পরিকল্পনাও নিতে হবে আর যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ফল ভালো হয়নি সে সব প্রতিষ্ঠানকে আরো ভালো করার উদ্যোগ নিতে হবে দ্রুত
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
mujibur29@gmail.com

No comments:

Post a Comment