Thursday, May 15, 2014

প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শিক্ষকদের পরামর্শ দরকার

 
ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০১৪, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২১, ১৫ রজব ১৪৩৫
(দৃষ্টিকোণ)
প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে শিক্ষকদের পরামর্শ দরকার
মো. মুজিবুর রহমান
কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের মুখে পুরো পরীক্ষা ব্যবস্থাই এখন প্রশ্নের মুখে পড়েছে। কেউ কেউ বলছেন, আমাদের দেশে যে প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়ে থাকে তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ থাকবেই। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন থেকে আরম্ভ করে মুদ্রণ ও বিতরণের প্রায় প্রতিটি স্তরেই নিরাপত্তাজনিত শিথিলতা বিরাজ করে বলেও অনেকে মনে করেন। এছাড়া যারা প্রাথমিকভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন এবং মডারেশনের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অসতর্কতার ফলেও অনেক সময় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার সুযোগ থেকে যায়। প্রশ্নপত্র যেখানে মুদ্রণ করা হয় সেখান থেকেও ফাঁসের সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া ত্রুটিযুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতির কারণেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রবণতা বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁস যে এ দেশে একেবারে নতুন ঘটনা তা নয়। বরং বহুকাল আগে থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোয় প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা থেকে আরম্ভ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে বেশি। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবরও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। এর আগে ২০১২ সালের এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। এমনকি ২০১৩ সালে অনেকগুলো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগও রয়েছে। এসব অভিযোগের মধ্যে খাদ্য বিভাগের নিয়োগ পরীক্ষা, সরকারি মাধ্যমিক স্কুলে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ আরও কয়েকটি পরীক্ষা রয়েছে। তখন স্কুলশিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। অবশ্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবরকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের মতে, আদৌ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর ওঠার পর তদন্ত করে দেখা গেছে সেগুলো নাকি সাজেশন ছিল! তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সব খবরই যে গুজব নয়, সেটা প্রমাণ হয়ে গেছে সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষার আংশিক বাতিল করে পুনরায় তা গ্রহণের মধ্যদিয়ে। তবুও এ প্রসঙ্গে আমরা বলব, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রগুলো যদি সত্যিই সাজেশন হয়ে থাকে তাহলেও সেগুলো পরীক্ষার আগে যে উপায়ে এবং যে পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থীদের হাতে চলে আসে তাতে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বিভ্রান্ত না হয়ে পারে না। এ বিভ্রান্তি নিরসনের জন্যও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের উপায় কী? এরই মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ এসেছে। কেউ কেউ বলছেন, পরীক্ষার প্রায় আধঘণ্টা আগে কেন্দ্রে কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র মুদ্রণের কাজটি সম্পন্ন করে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে পারলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের আশঙ্কা কমে যাবে। আবার অনেকেই বলছেন, প্রশ্নপত্র মুদ্রণের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সহায়তা নেয়া যেতে পারে। আমার ধারণা, এগুলো হতে পারে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের একেকটা উপায়। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের ব্যবস্থা কতটুকু সফল হবে এবং সুফল দেবে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। আর যে কোনো পরামর্শ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ না করে শুধু তাত্ত্বিকভাবে এর কার্যকারিতা যাচাই করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে আমি মনে করি, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের উপযুক্ত উপায় খুঁজে বের করার জন্য এখন জাতীয়ভাবে পরামর্শ সভার আয়োজন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রাথমিকভাবে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত পণ্ডিত ও খ্যাতিমান শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করতে পারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এ ধরনের মতবিনিময় সভায় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধের কার্যকর উপায় বের হয়ে আসবে। এছাড়া অব্যাহতভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মুখে এখন পরীক্ষা পদ্ধতিরও সংস্কার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বর্তমানে প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি আরও উন্নত করা যায় কিভাবে সেসব দিক নিয়েও আলোচনা করা জরুরি। একই সঙ্গে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ব্যবস্থা নিয়েও ভাবতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো সমাধানের উপায় বের করার জন্য শিক্ষকদের মতামত অধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষকরাই ভালো বলতে পারবেন, কিভাবে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। উন্নত দেশগুলো শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সমস্যা সমাধানে জাতীয়ভাবে খ্যাতিমান শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষকদের মতামতের গুরুত্ব দিয়ে থাকে। আমাদের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল শিক্ষকদের পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সংকট থেকে পরীক্ষার্থীরা মুক্তি পাবে বলে মনে করি।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ।
mujibur29@gmail.com
http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDVfMTVfMTRfMV81XzFfMTMwNTI5 

No comments:

Post a Comment