Thursday, November 28, 2013

গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার যৌক্তিকতা



ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৩, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪২০, ২৩ মহররম ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার যৌক্তিকতা
মো. মুজিবুর রহমান
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হলো, উচ্চশিক্ষায় ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ সহজে নিরসন হচ্ছে না। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে ধরনের সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে সেটা লাঘব করার উদ্দেশ্যেই এ দুটো বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে গুচ্ছ পদ্ধতিতে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে যাচ্ছিল। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি একই দিনে একই সময়ে অভিন্ন প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানে একমত হয়েছিল। এ ধরনের পরীক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, যেসব শিক্ষার্থী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো একটিতে ভর্তি হতে আগ্রহী তাদের আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না। এমনকি তাদের কাউকেই দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই উপস্থিত হওয়ার দরকার হবে না। তাদের যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই হবে। গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রধান সুবিধা, শিক্ষার্থীরা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলেই গুচ্ছের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে বলে গণ্য হবে। এর ফলে পরীক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটাছুটি করার দরকার হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করার মধ্য দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের ধারণাকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছুদিন ধরে খোদ সিলেটের বিভিন্ন মহল দাবি উত্থাপন করে আসছিল। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একটা অংশও এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে একদল শিক্ষার্থীর মানববন্ধনের খবরও আমরা গণমাধ্যমে দেখেছি। গত সোমবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়রের নেতৃত্বে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকও করেন। কিন্তু ওই বৈঠকে দৃশ্যত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে। এদিকে বিভিন্ন সংগঠন একই প্রশ্নপত্রে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পরীক্ষার দিন সিলেটে হরতাল ডাকার ঘোষণা দেয়ায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করে ৩০ নভেম্বর নির্ধারিত ভর্তি পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ঘোষণার ফলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হলো।
আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষা স্তরে শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিয়ে সমস্যা ও সংকট নতুন নয়। দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীদের তুলনায় আসন সংখ্যা কম থাকায় ভর্তি পরীক্ষা এলেই এ সংকট আরও ঘনীভূত হয়। বাস্তব পরিস্থিতিতে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করলেও নিজের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে কিনা এর নিশ্চয়তা না থাকায় সবাই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে চায়। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করার যোগ্য তাদের প্রায় সবাই সব বিশ্ববিদ্যালয়েই আবেদনপত্র জমা দিয়ে থাকে এবং চেষ্টা করে যাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যায়। এটা করতে গিয়ে তাদের এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যেতে হয়। এর ফলে একদিকে তাদের যেমন যাতায়াতের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়, অন্যদিকে অভিভাবকদের টাকাপয়সাও খরচ হয় প্রচুর। অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির কারণে তাদের পক্ষে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। কাজেই ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের আবেদন করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় যদি একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাহলে তাদের পক্ষে কেবল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেই অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। ফলে যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও শুধু পদ্ধতিগত কারণে অনেকের পক্ষে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। এ পরিস্থিতিতে তারা তখন ভাগ্যনির্ভর হয়ে পড়ে। এভাবেই পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করার স্বপ্ন চিরতরে ধুলিসাৎ হয়ে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি নিরসন করার উদ্দেশ্যেই একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে গুচ্ছ গঠন করে একই দিনে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ধারণা আসে। দৃঢ়ভাবে আশা করা হয়েছিল, সিলেট এবং যশোরে অবস্থিত দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করবে এবং এর সুবিধা ও অসুবিধা পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে দরকার হলে পরবর্তীকালে একই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু পরীক্ষামূলক এ উদ্যোগটি শুরুতেই বাধাপ্রাপ্ত হলো।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.com

No comments:

Post a Comment