ঢাকা, মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ ২০১৪, ২০ ফাল্গুন ১৪২০, ০২ জমা. আউয়াল ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধারের দায়িত্ব
কি শিক্ষার্থীদের?
মো. মুজিবুর রহমান
আমাদের ধারণা ছিল, জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া হলগুলো উদ্ধারের জন্য সরকারের তরফ থেকে আশ্বাস দেয়ার
পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে ধীরে ধীরে। আমরা এটাও ভেবেছিলাম, সরকারের
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের
কাছে হস্তান্তর করবে দ্রুত। অথচ বাস্তবে তেমন কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। বরং
হল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার পরিস্থিতি দিন দিন আরো খারাপ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের
সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
শান্তিপূর্ণ রাখার জন্য এসবের সঙ্গে পুলিশও জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শহীদ আজমল হোসেন হলটি নিজেদের দখলে নিয়ে আসার জন্য
গত রবিবার অভিযান চালিয়েছে। এর আগে বেদখল হওয়া হলগুলো উদ্ধারের জন্য তাদের পক্ষ
থেকে ব্যাপক প্রচারণা ও প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছিল। তৈরি করা হয়েছিল সাইনবোর্ড,
ব্যানার। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ওইদিন আজমল হোসেন হলের সামনে ব্যানারও টাঙাতে
গিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। কিন্তু বাধাপ্রাপ্ত হয়ে তারা অন্য একটি হলের সামনে ব্যানার
লাগিয়ে দেয়। এর কিছুক্ষণ পর স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সেটি খুলে পুড়িয়ে ফেলেন এবং আবাসিক
এলাকায় হল না করার জন্য স্লোগানও দেন। এ নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উত্তপ্ত
পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হওয়া হলগুলো দ্রুত উদ্ধার
এবং অশান্ত পরিস্থিতির অবসান হবে সেটাই এখন ভাবনার বিষয়। কারণ হল উদ্ধার নিয়ে
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন যে ধরনের পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে তাতে যে কোনো
মুহূর্তে পুরো এলাকায় ঘটতে পারে আরো বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এর আগে এ নিয়ে
এক ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীসহ অনেক শিক্ষকও আহত হওয়ার খবর
রয়েছে। এ অবস্থায় হল উদ্ধার নিয়ে বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আমরা উদ্বিগ্ন।
বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের
হলগুলো নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে পুরান ঢাকার
স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি হল দখল করে নেয়। বেদখল হওয়া
এসব হলের মধ্যে মাত্র ৬টি হলের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে। হলগুলো
উদ্ধারের জন্য অনেক বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আদালতে মামলা দায়ের করে। আদালত
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে প্রভাবশালীরা
হলগুলো নিজেদের দখলে রাখে। বিস্ময়ের ব্যাপার, তখন সরকারের পক্ষ থেকেও আদালতের রায়
বাস্তবায়নে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষ কয়েকদফা চেষ্টা করেও হলগুলো উদ্ধার করতে পারেনি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা সেগুলো বেদখলমুক্ত করার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছে।
এখানে আমরা গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ
করতে চাই, যেসব হল বেদখল হয়েছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে সেগুলো দখলমুক্ত করে
দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হস্তান্তর করার কোনো বিকল্প নেই। আর এটি করতে হবে
সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই। এ উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কাম্য নয় কিছুতেই।
আমরা ভেবে পাই না, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল উদ্ধারের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে
হবে কেন? শিক্ষার্থীদের কাজ কি হল উদ্ধার করা? দেশে উপযুক্ত আইন-আদালত রয়েছে,
রয়েছে কার্যকর সরকার ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও রয়েছে। কাজেই এ
অবস্থায় একদিকে যেমন বহু বছর ধরে বেদখলে থাকা হলগুলো উদ্ধারের জন্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযান চালানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে,
তেমনি অন্যদিকে হলগুলো উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততাও প্রশ্নবিদ্ধ। আমরা মনে
করি, যে কোনো স্থাপনা বেআইনি দখলমুক্ত করার দায়িত্ব সরকারের। প্রয়োজন হলে
সরকারকে আইনসম্মত উপায়ে শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
আলোচ্য ক্ষেত্রে জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আদালতের রায়ও রয়েছে। কাজেই আদালতের রায় বাস্তবায়নের জন্য
হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিযানে নামতে হবে শিগগির; শিক্ষার্থীদের নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করা।
সন্দেহ নেই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থীরা চরম আবাসন সংকটের মধ্যদিয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়,
জগন্নাথ কলেজটি ২০০৫ সালের এক আইনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হওয়ার পর থেকে
নানা ধরনের সমস্যা ও সংকটের মধ্যদিয়ে এগিয়ে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার আগেও যে
এখানে সমস্যা ছিল না তা নয়। কিন্তু তখন সরকারি কলেজ হিসেবে এর যাবতীয় ব্যয়ভার বহন
করত সরকার। এখন এর দায়-দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফলে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থসংকট আরো বেড়েছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাঝে মাঝে চেষ্টা করে আয়
বাড়ানোর জন্য কোর্স ফি বাড়িয়ে দেয়ার। একবার বিভিন্ন কোর্সের ফি বৃদ্ধি নিয়ে
সাধারণ শিক্ষার্থীরা পথে নেমে আসতে বাধ্য হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক সংকট
এবং অযৌক্তিভাবে কোর্স ফি বাড়ানোই ছিল তখনকার আন্দোলনের মূল কারণ। এবারও দেখা
যাচ্ছে, হল নিয়ে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন আরম্ভ করেছে। আমরা চাই, পরিস্থিতি আরো
খারাপের দিকে মোড় নেয়ার আগেই সরকারের তরফ থেকে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নেয়া এবং
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করা হবে। এ
দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়েরও।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি
টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহmujibur29@gmail.com
http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMDNfMDRfMTRfMV80XzFfMTEzMDk1
No comments:
Post a Comment