Thursday, February 20, 2014

ভাবতে হবে মাধ্যমিক শিক্ষার মান নিয়ে



ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, ৮ ফাল্গুন ১৪২০, ১৯ রবিউস সানী ১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
ভাবতে হবে মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে
মো. মুজিবুর রহমান
বিগত কয়েক বছরে শিক্ষাক্ষেত্রে মহাজোট সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। এসব সাফল্যের মধ্যে রয়েছে, স্কুলে গমনোপযোগী শিশুদের সংখ্যা বৃদ্ধি, প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে কোটি কোটি বই বিতরণ, শিক্ষা বছরের প্রথমদিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব উদযাপন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো, নির্ধারিত সময়ে পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ এবং যথাসময়ে ফলাফল প্রকাশ ইত্যাদি। জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন, শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন, শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম তৈরি, বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনের সব পাঠ্যবইয়ের ই-বুক উন্নয়ন করে তা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা, দেশের শ্রেষ্ঠ স্কুলের শ্রেণিকক্ষের পাঠদান বাংলাদেশ টেলিভিশনে সপ্তাহে তিনদিন সম্প্রচারের ব্যব্যস্থা করা সরকারের সাফল্যের অন্যতম দিক।
এসব ছাড়াও শ্রেণিকক্ষে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ডিজিটাল কনটেন্ট উপস্থাপনের জন্য হাজার হাজার স্কুলে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। বিগত কয়েক বছরে মাধ্যমিক স্কুলগুলোর কয়েক লাখ শিক্ষককে পেশাগত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন চলছে শিক্ষকদের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরির প্রশিক্ষণ। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কম্পিউটার, ইন্টারনেট ও মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে কিভাবে পাঠদানের বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের কাছে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলা যায় তা শিক্ষকদের শেখানো হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে এতকিছু করার পরও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা নিয়ে সংকট যেন কাটছে না। এখানে কয়েকটি দিক নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালা-২০১২ প্রণয়ন সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ ছিল। এ নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রকাশে আমরা আশা করেছিলাম, দ্রুতই কোচিং ব্যবস্থা বন্ধ হবে। অথচ তা হয়নি। ফলে এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে এখনো অনেক সংশয় রয়েছে। দীর্ঘদিন আগে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হলেও তা এখনো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এসব কোচিং সেন্টারের সঙ্গে স্কুলে কর্মরত অনেক শিক্ষকের জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে। তবে এর চেয়েও উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো, স্কুলের শিক্ষক ছাড়া কোচিং সেন্টারগুলোয় যারা পড়ান তাদের অধিকাংশেরই আধুনিক পাঠদান পদ্ধতি ও কলাকৌশল এবং পেডাগজি সম্পর্কে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। ফলে কোচিং সেন্টারে গমনকারী শিক্ষার্থীরা মুখস্থ করার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। দেখা যায়, সরকার স্কুল শিক্ষকদের মাঝে মাঝে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। স্কুল শিক্ষকদের দিয়ে শিশুদের পড়ানো এবং কোচিং সেন্টারে জড়িত প্রশিক্ষণবিহীন ব্যক্তিদের দিয়ে পড়ানোর মধ্যে অনেক পদ্ধতিগত পার্থক্য বিদ্যমান। এ পার্থক্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে শিক্ষার গুণগত মানের। এর ফলে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে শঙ্কার সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় পরীক্ষায় পাসের হার বাড়লেও গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ঠিকই থেকে যায়। কার্যত এটা দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কাজেই বাস্তব পরিস্থিতিতে কোচিং সেন্টারগুলো নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত সিদ্ধান্তে আসা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এখানে গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করা দরকার, মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় শিক্ষক সংকট, প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের অভাব, বহু স্কুলের অবকাঠামোগত দুর্বলতা, স্কুলগুলোয় আধুনিক বিজ্ঞানাগার না থাকা ইত্যাদি দিকগুলো মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মান বিঘ্নিত করছে ব্যাপকভাবে। সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ৩২৩টি সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ২১৩টি স্কুলেই প্রধান শিক্ষক নেই এবং ৪৪৬টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদের মধ্যে খালি আছে ১৩৭টি। আবার যে সব শিক্ষক প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন, তাদের অনেকেই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে সন্দেহ নেই, প্রকৃত শূন্য পদের সংখ্যা আরো বেশি হবে। একই তথ্যে জানা গেছে, স্কুলগুলোয় সহকারী শিক্ষকের পদ খালি আছে এক হাজার ৫৩২টি। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব শূন্য পদ দ্রুত পূরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে খবরও রয়েছে। কিন্তু আমরা ভেবে পাই না, মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় এতো বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য রেখে শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কিভাবে সম্ভব? স্কুলে পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ না থাকলে শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে শেখার সুযোগ পাবে না। বিজ্ঞানাগার না থাকলে শিক্ষার্থীদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠিত হবে না। আর লাইব্রেরি না থাকলে বই পড়ায় তাদের আগ্রহ বাড়বে কিভাবে? মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের স্বার্থেই এসব দিক ভেবে দেখতে হবে। একই সঙ্গে স্কুলগুলোর পাঠদান কার্যক্রম সুপারভিশন ও মনিটরিং করার ব্যবস্থাও নিতে হবে জরুরিভিত্তিতে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
mujibur29@gmail.com

Monday, February 17, 2014

সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে ভাবতে হবে



ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৪, সোমবার : ফাল্গুন ৫, ১৪২০
(বাতায়ন)
সাপ্তাহিক ছুটি নিয়ে ভাবতে হবে
মোঃ মুজিবুর রহমান
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
২০১৩ সালে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যের যতটুকু ক্ষতি হয়েছে তার কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়ার জন্য সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনের পরিবর্তে একদিন করার দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। কয়েক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তারা এ দাবি জানান। ব্যবসায়ীরা বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশে সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। কিন্তু আমাদের শুক্র ও শনিবার দুদিন ছুটি। ফলে বিশ্ব থেকে তিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছি আমরা। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে সাপ্তাহিক ছুটি কমিয়ে দেয়ার ব্যাপারে সরকার এখন কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটাই দেখার বিষয়।
সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন থাকবে নাকি একদিন করা হবে, তা নিয়ে অনেক দিন ধরে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। আমাদের দেশে অনেক আগে সপ্তাহে একদিন সাপ্তাহিক ছুটি ছিল। তখন ছুটি থাকত রোববার। পরে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ঘোষণা করা হয়। এরপর শুক্রবারের সঙ্গে শনিবারও যুক্ত করে সপ্তাহে দুদিন ছুটি চালু করা হয়েছে। এ নিয়ে অতীতে অনেক আলোচনাও হয়েছে। সপ্তাহে দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি বহাল রাখার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে একসময় বলা হয়েছিল, দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতির কারণে দেশজুড়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। ফলে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সপ্তাহে দুদিন ছুটি বহাল রাখা জরুরি। বিদ্যুতের ঘাটতির মুখে এ ধরনের বক্তব্য তখন অনেকাংশে গ্রহণযোগ্য হলেও বর্তমানে তা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা ভেবে দেখতে হবে গুরুত্বের সঙ্গে। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে সপ্তাহে দুদিন ছুটির কোনো প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সেটাও ভাবতে হবে। দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়লেও লোডশেডিং আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। যদিও এরই মধ্যে বোরো মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। গ্রীষ্মকালও এগিয়ে আসছে। এ সময়টাতে বিদ্যুতের চাহিদা থাকে অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। তারপরও বর্তমানে গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহে কিছুটা ঘাটতি থাকলেও শহরাঞ্চলে খুব একটা ঘাটতি নেই। এ অবস্থায় সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন বহাল রাখার কোনো যুক্তি আছে বলে মনে হয় না।
বর্তমানে আমাদের দেশে দুধরনের ছুটির অস্তিত্ব দেখা যায়। এক ধরনের ছুটি শিক্ষা বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। আরেক ধরনের ছুটি সরকারের সাধারণ প্রশাসন বিভাগের জন্য প্রযোজ্য। শিক্ষা বিভাগের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সপ্তাহে একদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি ভোগ করছে। অবশ্য সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আরও নানা উপলক্ষে অনেকদিন ছুটি ভোগ করে থাকে। ফলে স্কুল-কলেজগুলোয় বছরে ছুটির সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় চার মাস। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ শিক্ষা প্রশাসন পরিচালনাকারী অধিদফতর, বিভাগীয় শিক্ষা অফিস, আঞ্চলিক শিক্ষা অফিস, জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলো সপ্তাহে দুদিন ছুটির আওতায় রয়েছে। ফলে ছুটি নিয়ে দেশজুড়ে এক ধরনের বৈষম্য বিরাজ করছে বলে অনেকে মনে করেন। এ কারণে শিক্ষা প্রশাসন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতারও সৃষ্টি হয়। সরকারের প্রশাসন বিভাগের অফিস সপ্তাহে দুদিন বন্ধ থাকায় মাঠপর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও শিক্ষা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে বিঘ্ন ঘটছে। দেখা যায়, শনিবার স্কুল খোলা থাকলেও নিজেদের সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা স্কুল পরিদর্শনের জন্য স্কুলে যান না। এর ফলে বিপুলসংখ্যক স্কুল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। এ সুযোগে অনেক স্কুলে নানা ধরনের অনিয়ম বাসা বাঁধে। সাপ্তাহিক ছুটির হিসাব করলে দেখা যায়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে ১০৪ দিন ছুটি ভোগ করছে। অথচ সপ্তাহে একদিন ছুটি থাকলে তা ৫২ দিন হতো। সব বিভাগের জন্য সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে আরও নানা ধরনের ছুটি রয়েছে। শুধু সাপ্তাহিক ছুটির কারণেই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরে সাড়ে তিন মাস বন্ধ থাকছে। অন্যান্য ছুটির হিসাব করলে বছরে ছুটির সংখ্যা আরও বেড়ে যায়। এ অবস্থায় সরকারি কাজকর্মে প্রত্যাশিত গতি আসতে পারে না। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশ এমনিতেই অনেক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। কাজেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনতে হলে সপ্তাহে কর্মদিবসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আর এটা করা যায় সাপ্তাহিক ছুটি একদিন কমিয়ে দিয়ে।
সরকারি অফিসের সময়সূচি নিয়েও নানা ধরনের অভিমত রয়েছে। যতদূর মনে পড়ে, অনেক বছর আগে রাজধানী ঢাকায় সরকারি অফিসের সময়সূচি ছিল সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত। এর ফলে সরকারি চাকরিজীবীরা অফিসের কাজকর্ম করে বিকালের দিকে পারিবারিক কাজে ৬-৭ ঘণ্টা সময় দিতে পারতেন। এখন অফিস শুরুর সময় সকাল ১০টা হওয়ায় তারা আর আগের মতো পরিবারের জন্য সময় বের করতে পারেন না। এখন তারা না পারেন সকালে সময় দিতে, না পারেন বিকালে সময় দিতে। অন্যদিকে দেখা যায়, ভোর হওয়ার পর থেকে সরকারি দফতরে কাজকর্ম শুরু করতে করতেই ৪-৫ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়। আবার সবাই যে ঠিক ১০টায় অফিসে আসেন তা-ও নয়। যানজটসহ নানা কারণে অনেকের এক-দেড় ঘণ্টা দেরিও হয়। এর ফলে নষ্ট হয় বহু কর্মঘণ্টা। অফিস শুরুর আগেই সরকারি চাকরিজীবীদের যে কয়েক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়ে যায়, সে সময়টা বাস্তবে কোনো কাজে লাগে না। কাজেই এখন চাকরিজীবী মানুষের কর্মঘণ্টার যুক্তিসঙ্গত ও বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবহারের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে গতি আনতে হবে।
এখানে বলা দরকার, সরকারি প্রশাসন পরিচালনার প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। অনেক সময় তাদের চাপে মন্ত্রণালয়গুলোর অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে, সরকারের দৈনন্দিন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটে ব্যাপকভাবে। সরকারি প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ব্যক্তির সাক্ষাৎ দিতে হয় প্রায় প্রতিদিন। দেখা যায়, অফিস সময় সকাল ১০টায় নির্ধারিত থাকায় অনেক তদবিরকারী সরকারি কর্মকর্তাদের প্রায় পেছনে পেছনেই মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অফিসের কাজ শুরু করার আগেই মুখোমুখি হন সাক্ষাৎপ্রার্থীদের। এ অবস্থায় দৈনন্দিন কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিঘ্ন ঘটে। অথচ অফিস শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টায় হলে মন্ত্রণালয়ে তদবিরকারীদের আসার আগেই অনেক কাজ দিনের পূর্বভাগেই শেষ করা সম্ভব হতো। শুধু তাই নয়, দাফতরিক কাজকর্ম শুরু করার জন্য আরও কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা সময় বেশি পাওয়া যেত। এছাড়া অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সময়সূচি ও সরকারি অফিসের সময়সূচি একই হয়ে যাওয়ায় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের ওপরও চাপ পড়ে। ফলে সৃষ্টি হয় যানজটের। এসব দিক সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে। সরকার যদি সাপ্তাহিক ছুটি দুদিনের পরিবর্তে একদিন এবং আগের মতো শুধু ঢাকায় সরকারি অফিস শুরুর সময় সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টায় নির্ধারণ করে, তাহলে সরকারি কাজকর্মে গতি আসবে বলে মনে করি।
মোঃ মুজিবুর রহমান : সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
mujibur29@gmail.com

Friday, February 14, 2014

সুযোগ দিন মেধার ভিত্তিতে



শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
(উপ-সম্পাদকীয়)
মেডিকেল শিক্ষা
সুযোগ দিন মেধার ভিত্তিতে
মোঃ মুজিবুর রহমান
২০১৩ সালের শেষ দিকে ১২টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। এখন সেসব মেডিকেল কলেজের অনুমোদন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। শুধু তা-ই নয়, নতুন করে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অনুমোদনে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্তও নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে দেশের বিপুলসংখ্যক বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ সরকারের নীতিমালা মেনে যথাযথভাবে মেডিকেল শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে কিনা, তা-ও তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। চিকিৎসাবিদ্যার গুণগত মান নিশ্চিত করার স্বার্থেই যে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। আমরা মনে করি, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এ ধরনের উদ্যোগ প্রশংসনীয় এবং গৃহীত সিদ্ধান্ত মেডিকেল শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে সহায়ক হবে। কিন্তু এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শেষ পর্যন্ত কতটুকু সফল হতে পারবে,সেটাই দেখার বিষয়।
আলোচ্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অনুমোদন স্থগিতের পেছনের কারণ পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য মেধাস্কোর কমিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে এসব কলেজের মালিকরা। একটি পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া যে কোনো শিক্ষার্থীকেই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন। আর বাংলাদেশ বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ অ্যাসোসিয়েশন ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় স্কোর ১২০ থেকে কমিয়ে ১০০ করার দাবিও জানিয়েছে। তাদের বক্তব্য, ভর্তির স্কোর বেশি হওয়ায় মেডিকেল কলেজগুলোয় কাঙ্ক্ষিত হারে ছাত্রছাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অনেক মেডিকেল কলেজ নাকি বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কলেজগুলোর মালিকপক্ষের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৪০ শতাংশ আসন খালি রয়ে গেছে। এসব আসন পূরণ করার জন্যই তারা ভর্তির স্কোর কমানোর দাবি উত্থাপন করেছিলেন। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিচালনায় জড়িতদের কেউ কেউ বলেছেন, মেডিকেল কলেজের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ভর্তি স্কোর না কমালে শিক্ষার্থী সংকটে ভুগবে কলেজগুলো!
উচ্চহারে ভর্তি ফি বহাল রেখে মেধাস্কোর কমিয়ে দেয়ার যে দাবি উত্থাপন করেছে মেডিকেল কলেজগুলোর মালিকপক্ষ, তা কিছুতেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের বিস্ময়কর দাবি বাস্তবায়ন হলে মেডিকেল শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এবং কী ধরনের চিকিৎসক তৈরি হবে, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রাখতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রশ্ন জড়িত রয়েছে যে শিক্ষার সঙ্গে, সেখানে যেকোনো অজুহাতে গুণগত মানের ব্যাপারে কোনো ছাড় দিলে নিঃসন্দেহে তা হবে আত্মঘাতী। কাজেই মেডিকেল শিক্ষার মান ধরে রাখার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এরই মধ্যে যেসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয়ের দৃঢ় ভূমিকা কাম্য।
এমনিতেই আমাদের দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রচুর অর্থ ব্যয় করেও অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত মানের চিকিৎসা সেবা পেতে ব্যর্থ হন। ভুল চিকিৎসার শিকার হওয়ার অভিযোগও নতুন নয়। আবার প্রয়োজন না হলেও অনেক চিকিৎসক শুধু অর্থের মোহে পড়ে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে থাকেন বলেও প্রায়ই খবর বের হয় গণমাধ্যমে। বিনিময়ে তারা সংশ্লিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে নাকি কমিশনও পান। বেশির ভাগ চিকিৎসক প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার সময় রোগীকে খুব কম সময় দেন। এছাড়া চিকিৎসা সেবা নিয়ে আরো নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। সরকারি হাসপাতালেও রোগীরা কম দুর্ভোগের শিকার হন না। আমরা এ ধরনের অভিযোগের অবসান চাই। এটা দূর করার দায়িত্ব একদিকে যেমন চিকিৎসকদের ওপর বর্তায়, অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও রাখতে হবে কার্যকর ভূমিকা চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত করার স্বার্থে নিতে হবে যথাযথ উদ্যোগ। একই সঙ্গে সমাজের সাধারণ মানুষেরও এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
অনেকেই বলছেন, যারা সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারে না, তাদের জন্য বেসরকারি মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চহারে ভর্তি ফি নির্ধারণ করার কারণেই নির্দিষ্ট আসনগুলো পূরণ করার মতো পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। বাস্তবে দেখা যায়, শুধু বেসরকারি মেডিকেল কলেজ নয়, বরং অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চহারে ভর্তি ফি আদায় করছে। আর উচ্চশিক্ষা দানকারী সরকারি মেডিকেল কলেজ এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা চাহিদার তুলনায় কম থাকায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী অনন্যোপায় হয়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকে পড়ে। এ সুযোগে অধিক অর্থলাভের আশায় বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক উচ্চহারে ফি নির্ধারণ করেন বলে প্রায়ই কথা ওঠে। অথচ ভর্তি ও অন্যান্য ফি কমিয়ে তারা শিক্ষার্থী আকর্ষণ করবেন এমন কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায় না সচরাচর। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেরই প্রায় একই রকম প্রবণতা লক্ষ করা যায়। কাজেই সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা ও পেশাগত শিক্ষা পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন খাতে কী পরিমাণ ফি আদায় করতে পারবে, তা সরকারের তরফ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া দরকার। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যেও সমন্বয় থাকা জরুরি।
চিকিৎসাবিদ্যাসংশ্লিষ্ট এক তথ্যে দেখা যায়, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় আসনসংখ্যা রয়েছে প্রায় ছয় হাজার। এসব কলেজে গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা করে আদায় করা হয় শুধু ভর্তির নামে। এছাড়া আরো নানা সময়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় তো রয়েছেই। অন্যদিকে বেসরকারি ডেন্টাল কলেজগুলোয় আসনসংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। এসব কলেজেও উচ্চহারে ভর্তি ফি আদায় করার অভিযোগ রয়েছে। কোনো কোনো ডেন্টাল কলেজে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আদায় করা হয় শুধু ভর্তির সময়ই। অথচ বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ পরিচালনার জন্য সরকার নির্ধারিত যেসব শর্ত রয়েছে, সেগুলো পূরণ না করে বা ক্ষেত্রবিশেষে উপেক্ষা করে প্রায় সব কলেজই তাদের প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাবিদ্যা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। পরিতাপের বিষয়, চিকিৎসাবিদ্যার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে মানসম্মত ও মেধাবী চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে কিনা, সেদিকে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ থাকে না বললেই চলে। এসব কারণে শুধু টাকা থাকলেই চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ অবারিত হয়ে উঠছে দিন দিন। এ ধরনের প্রবণতা রোধ করা দরকার মেডিকেল শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখার স্বার্থেই।
লেখক :সহযোগী অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ময়মনসিংহ
mujibur29@gmail.com
http://www.bonikbarta.com/sub-editorial/2014/02/14/32025