ঢাকা, সোমবার ৭ জুলাই ২০১৪, ২৩ আষাঢ় ১৪২১, ৮ রমজান
১৪৩৫
(উপ-সম্পাদকীয়)
শিক্ষা
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
ব্যবস্থাপনা
মো.
মুজিবুর রহমান
বাংলাদেশে
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উচ্চশিক্ষা পরিচালনার ক্ষেত্রে নানা ধরনের অনিয়ম বিরাজ করছে
বহু বছর ধরে। এসব অনিয়মের মধ্যে রয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়াই বেসরকারি উদ্যোগে
যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা স্থাপন, কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অননুমোদিত
কোর্স চালু, স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে গড়িমসি করা, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে
উচ্চহারে কোর্স ফি আদায় ইত্যাদি। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ভর্তি-বাণিজ্য ও
সনদ বিক্রির গুরুতর অভিযোগও রয়েছে। আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন ছাড়াই চলছে অনেক প্রতিষ্ঠান। এ নিয়ে প্রায়ই দেশের
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও বন্ধ হয়নি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ
কার্যক্রম। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেশজুড়ে তাদের অবৈধ শাখা
ক্যাম্পাস খুলে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছে।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে সবচেয়ে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো
প্রশাসনিক শৃঙ্খলা নেই। কোনো কোনোটিতে রয়েছে একাধিক উপাচার্য। আবার উপাচার্যের
পদ নিয়ে আদালতে মামলা-মোকদ্দমাও পরিচালিত হচ্ছে। মামলা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের
মালিকানা নিয়েও। ফলে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভালোমানের পড়ালেখা হয় না তা মোটামুটি
নিশ্চিত করেই বলা যায়। আবার এসব বিরোধপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যারা সার্টিফিকেট
নিয়ে বের হচ্ছেন তাদের অনেককেই চাকরির বাজারে বিপাকে পড়তে হচ্ছে বলে পত্র-পত্রিকায়
খবর বেরিয়েছে।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের অব্যবস্থাপনা নিয়ে গত ৩ জুলাই একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত এক
খবরে বলা হয়েছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন না পেলেও
কেউ কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে সনদ-বাণিজ্যসহ
নানা অবৈধ কার্যক্রম। অনুমোদনভুক্ত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়
মঞ্জুরি কমিশনের তালিকায়ও এসব প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান বিনা
বাধায় দেশ জুড়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির নামে শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করছে। এ
ধরনের প্রবণতা আমাদের উচ্চশিক্ষার গুণগতমান নিয়ে এখন গুরুতর প্রশ্নের সৃষ্টি
করেছে। শুধু তাই নয়, অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েও অনেক
সময় প্রতারিত হতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। তার পরও শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের
চটকদার বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে ধাবিত হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। যেসব
শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের প্রচুর টাকা-পয়সা রয়েছে এবং যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি হতে ব্যর্থ হয় তাদের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে
ছুটে যায়। অবশ্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট এবং সেশনজটসহ প্রায় সময়েই সৃষ্ট
নানামুখী অস্থিরতার কারণেও অনেক শিক্ষার্থী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে
বাধ্য হয়।
বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন কোর্সে কত টাকা আদায় করতে পারবে
তা নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণও চোখে পড়ে না। বরং বলা যায়, শিক্ষা
মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের ইচ্ছামতো টাকা আদায়
করছে। এসব টাকার কোনো হিসাবও তারা কারো কাছে দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করে বলে মনে
হয় না। এখানে বলা দরকার, উন্নত দেশগুলোতেও বেসরকারি উদ্যোগে উচ্চশিক্ষা পরিচালিত
হয়ে থাকে। সেসব দেশেও রয়েছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেখানে শিক্ষার মান
নিয়ে কোনো আপস করতে শোনা যায় না। বরং উন্নত দেশের অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
আন্তর্জাতিক মানের। তাদের বহু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে ওপরের দিকে
রয়েছে। অথচ আমাদের দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ে স্থান
করে নিতে পারছে না! মানসম্মত শিক্ষার জন্য দরকার পর্যাপ্ত গবেষণা কার্যক্রম
পরিচালনা করা; নিয়মিত গবেষণাধর্মী জার্নাল বের করাও জরুরি। কিন্তু দেশের
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষায় গবেষণা নিয়ে কী ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে সেটাও
জানা যায় না।
এ
অবস্থায় বেসরকারি উদ্যোগে উচ্চশিক্ষা পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা
ফিরিয়ে আনতে হবে দ্রুত। দেশজুড়ে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে
তোলা কতটুকু সমীচীন সেটা নিয়েও ভাবতে হবে। দরকার হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে
পরিচালিত শিক্ষার গুণগতমান নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও কর্তৃপক্ষ গঠন
করতে হবে।
লেখক
: সহযোগী
অধ্যাপক, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
mujibur29@gmail.com
No comments:
Post a Comment