রোববার, ১৩ অক্টোবর, ২০১৩
(আজকের পত্রিকা-ফিচার)
কোন পথে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মো.
মুজিবুর রহমান |
তারিখ:
১৩-১০-২০১৩
শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষাব্যবস্থা কতটা সংকটের মধ্যে পড়তে পারে, তার এক জ্বলন্ত উদাহরণ সাম্প্রতিক সময়ের
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। এ
বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে চলছে উপাচার্য ও শিক্ষকদের মধ্যে বিরোধ। উভয়ের
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিশ্ববিদ্যালয়কে এখন এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে,
বলতে গেলে এখানে পড়ালেখার পরিবেশই নেই। উপাচার্য ও শিক্ষকদের
মধ্যে কী কারণে এবং কেন ধাক্কাধাক্কির মতো লজ্জাজনক ঘটনা ঘটল, তা আমাদের গভীরভাবে ভাবিয়ে তোলে।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কেন্দ্র করে অনেক দিন থেকেই
ক্যাম্পাস অস্থির হয়ে আছে। সাবেক উপাচার্য ড. শরীফ এনামুল কবির শিক্ষকদের আন্দোলনের
মুখে উপাচার্যের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড.
আনোয়ার হোসেনকে
উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন। স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে
অচলাবস্থার অবসান হবে; শিক্ষকরা বিভেদ ভুলে পাঠদানে মনোনিবেশ করবেন। কিন্তু
পরবর্তীকালে আবারো একইভাবে পরিবেশ অশান্ত হয়ে ওঠে শুধু উপাচার্য ও শিক্ষকদের মধ্যে
মতানৈক্যের কারণে। উভয়েই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে আসছেন।
যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিলে,
তা আলোচনার
মাধ্যমে নিরসন করাটাই যৌক্তিক হবে। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময়
ধরে শিক্ষকদের মধ্যে সৃষ্ট সংকট অবসানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তবে সময় এখনো শেষ
হয়ে যায়নি। উপাচার্যের পক্ষ থেকে যদি ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনার
উদ্যোগ নেয়া হয়, তাহলে নিশ্চয়ই সমস্যা সমাধানের একটা পথ খুঁজে পাওয়া যাবে।
একই সঙ্গে শিক্ষকদেরও সহনশীল মনোভাবের পরিচয় দিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় বসতে
হবে। বিকল্প হিসেবে আন্দোলনের যে পথ সামনে খোলা রয়েছে বলে উপাচার্য ও শিক্ষকরা মনে
করছেন এবং যে পথে তারা ক্রমাগত এগিয়ে চলেছেন, তাতে যে সমাধান নেই,
তা এরই মধ্যে
আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। মাঝখানে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন থেকে মূল্যবান সময়
হারিয়ে যাচ্ছে।
জাবির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে শিক্ষার্থীরা রয়েছেন চরম
উদ্বেগের মধ্যে। তাদের অভিভাবকরাও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। কিন্তু এদিকে কারো ভ্রুক্ষেপ
নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটিকে উপলক্ষ করে এরই মধ্যে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস
ছেড়ে চলে গেছেন। ছুটি শেষে তারা আবার ফিরে আসার আগে ক্যাম্পাসে শিক্ষার
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরবে কিনা— তা নিশ্চিত নয়।
প্রশ্ন ওঠে, শিক্ষকদের মধ্যে এত বিভেদের কারণ কী?
কেন বারবার
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে? শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদের
যে ক্ষতি হচ্ছে তা কি তারা পূরণ করতে পারবেন? বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান
বলেই কি উপাচার্য এবং শিক্ষকদের মধ্যে যত দিন ইচ্ছা বিরোধ চলতে পারে?
তাদের কাছে কি
শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের কোনো মূল্য নেই? বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ
করছে এবং উপাচার্য ও শিক্ষকরা যেভাবে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছেন,
সেখান থেকে কি
তারা বেরিয়ে আসতে পারেন না? আর এসব আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীরাইবা কী শিখবেন?
জাবির বর্তমান পরিস্থিতি দেখে আমাদের মনে এমন প্রশ্নেরও
সৃষ্টি হয় যে, তাহলে কি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ার
মধ্যে কোনো সমস্যা রয়েছে? আর যদি থেকেই থাকে, তাহলেও সেটা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা
যেতে পারে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন।
কিন্তু তার আগে জাবির উপাচার্যকে কেন্দ্র করে বারবার শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হবে,
ধাক্কাধাক্কির
মতো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে, এটা মেনে নেয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের স্বার্থে জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক দ্রুত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক,
সরকারি টিচার্স
ট্রেনিং কলেজ
mujibur29@gmail.com
No comments:
Post a Comment